![]()
একটি ফল দোকান ।
এক ছেলে দশাসই এক আপেল নিয়ে কামড় দিতে দিতে চলে যেতে উদ্যত ।
দোকানি টাকা চাইলো । ছেলেটি টাকা দিবে না । এই নিয়ে তর্কাতর্কি , হাতাহাতি । দু চার জন পথচারী দোকানীর
পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ছেলেটা পিঠ টান দিল । ছেলেটিকে কয়েক ঘা দেয়ায় , সবাই দোকানীকে বাহবা দিচ্ছিল ।
বাংলা সিনেমায় একটা কমন ডায়লগ আছে , '' আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না ।'' এটা শুধু সিনেমার সংলাপ নয় ।
এটা আইনের কথা , রাষ্ট্রীয় আদবও বটে । দোকানী এই আদবের বরখেলাপ করেছে । অর্থাৎ বেআদবি করেছে । অথচ মানুষ অবলীলায় বাহবা দিয়ে এই বেয়াদবিকে সাপোর্ট দিচ্ছে ।
কম্যুনিস্টদের একটা জনপ্রিয় স্লোগান আছে , সেল্প ডিফেন্স নেভার বিং বায়োলেন্স ।'' এর আলোকে এই ক্ষেত্রে আমিও না হয় দোকানীকে বাঁচিয়ে দিলাম ।
এবার পরের দৃশ্যে আসি ।
দশ বার জন ছেলে । হাতে লাঠি ,কিরিচ । সম্মুখে আপেল খেকো । দোকানীকে বেদম মাইর ,পালিয়ে প্রান রক্ষা । দোকান লনড ভণ্ড ,
ফল মুল রাস্তায় গড়াগড়ি ।
পরিস্থিতি শান্ত হলে দোকানীর প্রত্যাবর্তন । উৎসুক জনতার অভাব নাই । দোকানীকে উদ্দেশ্য করে সবার এক কথা ,
'' তুই ব্যাটা বিরাট অন্যায় করেছিস , সামান্য একটা আপেলের জন্য ছেলেটার গায়ে হাত দিতে গেলি কেন ? এবার হলতো !
যে ঘটনার জন্য পাবলিক একটু আগে দোকানীকে বাহবা দিচ্ছিল , সেই একই ঘটনার জন্য একই পাবলিক এখন উল্টো দোকানীকে দোষারোপ করছে ।
দেখা যাচ্ছে , কে সঠিক এই মানদণ্ড নির্ণীত হচ্ছে '' বেআদবির '' স্কেলে । যে বেয়াদবি করতে পারছে সেই সঠিক ।
যা আমরা দেখেছিলাম ৯৬ সালের আগে পরে । জামাত আওয়ামীলীগ জোট লাগাতার হরতাল , অসহযোগ , অবরোধ দিয়ে , যানবাহন পুড়িয়ে ,
রেল লাইন উপড়ে , লঞ্চ বন্ধ করে , সচিবালয় কর্মকর্তাকে দিগম্বর করে সারা দেশে এক ত্রাসের রাজত্ব তথা বেয়াদবির চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল ।
সে সময় সাধারণ পাবলিক তো বটেই , আমি অনেক বিএনপি সমর্থকদেরও বলতে শুনেছি , '' খালেদা জিয়া ক্ষমতা থেকে নামেনা কেন ?''
বর্তমানেও দেশে বিএনপি জোটের ডাকে লাগাতার অবরোধ হরতাল চলছে । অথচ মহাসড়ক গুলোতে রীতিমত যানজট । শহর গুলির চিত্রও একই ।
সরকার সংবাদ পত্র , ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করে , বিরোধী মত প্রকাশের সকল মাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে , বিরোধী নেতা কর্মীদের গুম ,খুন , ক্রসফায়ারে দিয়ে , গ্রহনযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে , অগন্তান্ত্রিক আর স্বৈরাচারী কায়দায় যখন ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা পাকা পোক্ত করতে চাইছে । তখন নিরুপায় বিএনপির হাতে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় স্বীকৃত প্রতিবাদের ভাষা অবরোধ , হরতাল দেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নাই ।
এমতাবস্থায়ও বিএনপির ন্যায্য কর্মসূচীর সাথে জনগন একাত্ম না হয়ে , অবরোধ ভঙ্গ করছে , বিষয়টা কি ?
আগেই বলেছি দেশের মানুষ সব সময় বেয়াদবের পক্ষে । এই ক্ষেত্রে তারা এখন পর্যন্ত সরকারকেই এগিয়ে রাখছে ।
তাই তারা সরকারের পক্ষেই তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে । আর বিরোধী জোট যদি বেয়াদবিতে সরকারকে টেক্কা দিতে পারে , তবেই পেতে পারে জনগনের স্বতঃস্ফূর্ত (?) সমর্থন । যদিও কোন পক্ষের বেয়াদবিই আমাদের কাম্য নয় ।
পরিশেষে একটি এডালট জোক - টেকনোলোজিতে পৃথিবীর বিস্ময় জাপান । এখানে প্রচুর ভূমিকম্প হয় । জাপানের পরিশ্রমী অধিবাসীদের সাথে ''অলস'' বিশেষণটি যায় না । গল্পের প্রয়োজনে আমাদের আলোচিত জাপানিটি মহা অলস ।
এই জাপানী বাসর ঘরে গেছে ।
সে তার জেন্ডার নির্ধারণকারী শারীরিক অংশটি যথাস্থানে প্রয়োগ করে পড়ে আছে । কাঙ্ক্ষিত তৎপরতা না দেখে স্ত্রী জানতে চাইলো বিষয় টা কি ?
জাপানীটি জানালো , '' শুধু শুধু পরিশ্রম করে লাভ কি ? আমি ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি , ভূমিকম্প শুরু হলে ও কাজ এমনিতেই হয়ে যাবে ।''
বিএনপির অবস্থাও হয়েছে এমন । তারা অবরোধ নামক দণ্ডটি যথাস্থানে প্রবেশ করিয়ে , কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জনে কোন তৎপরতা না দেখিয়ে , ''ভূমিকম্পে''র অপেক্ষায় আছে ।
জাপানী ভদ্রলোক আর বিএনপির প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে ,আপনাদের কাঙ্ক্ষিত সময়ে ভূমিকম্প নাও হতে পারে । ভূমিকম্পের আশায় পড়ে না থেকে , হয় দণ্ডের কর্মক্ষমতা দেখান অথবা দণ্ডটি বের করে আক্রান্ত কে নিষ্কৃতে দিন ।
( সূক্ষ্ম রুচিবোধ সম্পন্ন পাঠকরা ক্ষমা করবেন । )

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




